কুমিল্লা নামেই হোক কুমিল্লা বিভাগ
শিব্বীর আহমেদ • কুমিল্লার তিনটি ও নোয়াখালীর তিনটি জেলাকে নিয়ে প্রস্তাবিত ‘মেঘনা’ বিভাগ গঠন স্থগিত করায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। ২৭ নভেম্বর রোববার দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে নিকার বৈঠক শেষে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক।
উল্লেখ্য, গত বছরের ২১ অক্টোবর ও ৭ ডিসেম্বর ‘মেঘনা’ নদীর নামে কুমিল্লা ও ‘পদ্মা’ নদীর নামে ফরিদপুর বিভাগ হবে বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে ‘ফরিদপুর’ ও ‘কুমিল্লা’ নামে বিভাগ গঠনের দাবি রয়েছে জোরালো ভাবে। এই দুই অঞ্চলের জনগন কেউই চায়না ‘ফরিদপুর’ ও ‘কুমিল্লা’ নামের বাইরে অন্যকোন নামে বিভাগ গঠিত হোক। বিশেষ করে কুমিল্লার জনগন কখনই মেঘনা নামে কুমিল্লা বিভাগ মেনে নিবেনা।
শিব্বীর আহমেদপ্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কন্যা। জাতির পিতার সমস্ত গুণাবলী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মাঝে রয়েছে বলে দেশের জনগন তা অনুভব করতে পারে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ মাথায় রেখে জননেত্রী শেখ হাসিনা তাঁর সমস্ত কাজ এগিয়ে নিয়ে আজ তিনি বিশ্বনেত্রীতে পরিনত হয়েছেন। তিনি সাধারন মানুষের মনের ভাষা মুখের ভাষা বুঝতে পারেন। তিনি সাধারন মানুষের সাথে মিশে যান নির্দ্বিধায়। তিনি ফকিরকে বুকে জড়িয়ে নেন অনায়াশে, রিকশা ঠেলা গাড়িতে উঠে বসেন অবলীলায়। নৌকা বাঁশের সাঁকো দিয়ে পারাপার করেন। তাঁর ভিতরে ধনী গরীবের ব্যবধান দেখা যায়না। দেশের সাধারন মানুষ তাদের সকল দাবি দাওয়া জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছেই রাখেন এবং তিনি সেটা পূরণও করেন।
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল কুমিল্লা। কুমিল্লা এক সময় ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের অংশ ছিল। ১৭৩৩ সালে বাংলার নবাব সুজাউদ্দিন খান ত্রিপুরা রাজ্য আক্রমণ করে এর সমতল অংশ সুবাহ বাংলার অন্তর্ভুক্ত করেন। ১৭৬৫ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী ত্রিপুরা দখল করে। ১৭৬৯ সালে রাজস্ব আদায়ের সুবিধার্থে কোম্পানি একজন তত্ত্বাবধায়ক নিয়োগ করে। কুমিল্লা, তৎকালীন ঢাকা প্রদেশের অন্তর্গত ছিল। পরবর্তীতে ১৭৭৬ সালে কুমিল্লাকে কালেক্টরের অধীনস্থ করা হয়। এরপর ১৭৯০ সালে কোম্পানি শাসনামলে ত্রিপুরাকে জেলায় রূপান্তর করা হয়। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পরবর্তী সময়ে ১৯৬০ সালে এ অঞ্চলকে বৃহত্তর কুমিল্লা জেলা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। ১৯৮৪ সালে কুমিল্লার দুটি মহকুমা চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে পৃথক জেলা হিসেবে পুনর্গঠন করে কুমিল্লা জেলার বর্তমান ভৌগলিক সীমানা নির্ধারন করা হয়।
বর্তমানে কুমিল্লায় ২৭ ওয়ার্ড বিশিষ্ট ১টি সিটি কর্পোরেশন, ১৭টি উপজেলা, ১৮টি থানা, ৮টি দেপৗরসভা, ১৯২টি ইউনিয়ন, ৩ হাজার ৬৮৭টি গ্রাম এবং ১১টি সংসদীয় আসন রয়েছে। শিক্ষা-শিল্প-সাহিত্য সংস্কৃতির পাদপীঠ কুমিল্লা প্রাচীন ঐতিহ্য সমৃদ্ধ জেলা হিসেবে উপমহাদেশে সুপরিচিত। শিক্ষা বিস্তারে প্রাচীন ঐতিহ্যের ধারক-বাহক কুমিল্লা। ইউনেস্কোর তালিকাভুক্ত ঐতিহাসিক প্রত্নতত্ব নিদর্শন ময়নামতির শালবন বিহারটি মূলত তৎকালীন বৌদ্ধ শিক্ষা কেন্দ্র ছিল। নারী শিক্ষার প্রসারে বেগম রোকেয়ার অনেক আগেই, উপমহাদেশের প্রথম মহিলা নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরাণী কুমিল্লার লাকসামে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
১৮৯৯ সালে আনন্দ চন্দ্র রায় বাহাদুর প্রতিষ্ঠিত কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ শুধু এ অঞ্চলের নয়- পুরো বাংলাদেশের গৌরবোজ্জ্বল শিক্ষা কেন্দ্রের অনন্য উদাহরণ। ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আগে ভিক্টোরিয়া কলেজটিই দেশের একমাত্র মর্যাদাপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল।
এছাড়াও কুমিল্লা জিলা স্কুল, নবাব ফয়জুন্নেসা বালিকা বিদ্যালয়, ঈশ্বর পাঠশালা, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ, কুমিল্লা ক্যাডেট কলেজ, বাংলাদেশ আর্মি অন্তর্জাতিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ইস্পাহানি পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজসহ আরো অনেক স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কুমিল্লার শিক্ষার গৌরবকে প্রতিনিয়ত সমুন্নত করে চলেছে। এছাড়াও এ অঞ্চলের ৮টি জেলা নিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড কুমিল্লাকে সর্বোচ্চ মর্যাদায় আসীন করেছে। ২০০৬ সালে কুমিল্লার শিক্ষা বিস্তারের মুকুটে সবার্ধিক উজ্জ্বল পালক হিসেবে যাত্রা শুরু করে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। এতে বর্তমানে ৬টি অনুষদের অধীনে মোট ১৯টি বিভাগে পাঠদান করা হয়।
কুমিল্লায় বহু মনীষী জন্মগ্রহণ করেছেন যারা বিভিন্ন সময়ে জাতীয় ও আন্তজার্তিক পর্যায়ে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছেন। এদের মধ্যে মহাস্থবির শীলভদ্র, নওয়াব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী, শচীন দেব বর্মণ, শান্তি চৌধুরী, সুনীতি ঘোষ, ধীন্দ্রেনাথ দত্ত, শিব নারায়ণ দাস, আখতার হামিদ খান, ওস্তাদ আলী আকবর খান, বুদ্ধদেব বসু, সুফিয়া কামাল, মেজর আব্দুল গণি, অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ, আপেল মাহমুদ উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও জাতীয় কবি কাজী নজরুলের স্মৃতিবিজড়িত এই কুমিল্লা।
কুমিল্লা বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন একটি জেলা। দ্রুত গতিতে ক্রমবর্ধমান বাংলাদেশের অর্থনীতি ও যোগাযোগ ব্যবস্থায়- কুমিল্লার ভৌগলিক অবস্থান ও মানব সম্পদের সঠিক ব্যবহার অনস্বীকার্য। কুমিল্লা তার ইতিহাস, ঐতিহ্য, সম্পদ, সংস্কৃতি, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং এখানকার জনগণের উষ্ণ আন্তরিকতা দিয়ে সবাইকে সাদর সম্ভাষণে সদা প্রস্তুত।
ঐতিহ্যবাহী এই কুমিল্লার এগারোটি আসনে ভোটার সংখ্যা কমবেশ ৪৫ লাখের কাছাকাছি। শুধু এই ৪৫ লাখ ভোটারই নন, কুমিল্লার সর্বস্তরের জনগনের কাছে কুমিল্লা একটি ভালোবাসার নাম, কুমিল্লা শব্দটি এই অঞ্চলের জনগনের কাছে একটি অনুভুতি ও আশা আকাংখার প্রতীক গর্বের প্রতীক। কুমিল্লার জনগনের দীর্ঘদিনের চাওয়া ’কুমিল্লা’ নামেই কুমিল্লা বিভাগ। কুমিল্লা নাম ছাড়া অন্যকোন নামে এই বিভাগ গঠন করা হলে কুমিল্লার জনগন কোনদিনই মেনে নিবেনা। আর জোর করে চাপিয়ে দেয়া কোন কিছু বেশিদিন টিকেনা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানুষের ভাষা বোঝেন, মানুষ কি চায় তিনি তার মুল্য দেন। তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর কন্যা। মানুষের ভালোবাসায় মানুষের ভোটে তিনি আজ বিশ্বনেত্রীতে পরিনত হয়েছেন। তিন জানেন মানুষের কাছাকাছি কিভাবে যেতে হয়। তিনি জানেন মানুষের ভালোবাসা কিভাবে আদায় করতে হয়। মানুষের চাহিদা কিভাবে পুরণ করতে হয়। জনগণ চায়না এমন কিছু তিনি কোনদিনই করবেন বলে বিশ্বাস করেনা কুমিল্লার মাটি এবং মানুষ। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রতিহিংসার রাজনীতিও করেন না। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করার পরও তিনি আইনি প্রক্রিয়া আদালতের মাধ্যমে বিচার কার্য সম্পাদন করেছেন। তিনি কোন শর্টকাট পথে বিচার করে পিতৃহত্যার প্রতিশোধ নেননি। কারন তার ধমনীতে বইছে বঙ্গবন্ধুর রক্ত। তাই কুমিল্লা জনগন কখনো বিশ্বাস করেনা বঙ্গবন্ধুর কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে কুমিল্লার নাম পরিবর্তন করে মেঘনা নামে বিভাগ করবেন।
মেঘনা নামে কুমিল্লা বিভাগ গঠন প্রক্রিয়া স্থগিত করা হয়েছে। জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকারকে এজন্য সাধুবাদ জানাই। আশা করি খুব শিঘ্রই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা ‘কুমিল্লা’ নামেই কুমিল্লা বিভাগ ঘোষনা করে তা বাস্তবায়ন করবেন।
কুমিল্লা নামেই হোক কুমিল্লা বিভাগ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরেই পূরণ হোক কুমিল্লার মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ‘কুমিল্লা বিভাগ’।
জয় বাংলা
জয় বঙ্গবন্ধু।
– কবি, কথাসাহিত্যি ও সাংবাদিক
গেরিলা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান।