বন্ধ কুমিল্লা চিড়িয়াখানা, চলছে শাক-সবজির চাষ
বিশেষ প্রতিনিধি • কুমিল্লা চিড়িয়াখানায় দুই বছর আগেও নানা প্রজাতির প্রাণী ছিল। এখন সেটি বন্ধ। সেখানে এখন শাক-সবজি আবাদ করা হচ্ছে। কুমিল্লার কালিয়াজুরি মৌজায় জেলা প্রশাসকের বাসভবনের সীমানাপ্রাচীর ঘেঁষেই ১০ একর ১৫ শতক খাসজমিতে ১৯৮৬ সালে গড়ে তোলা হয় চিড়িয়াখানা ও বোটানিক্যাল গার্ডেন। বর্তমানে সেখানে মাত্র ২৪টি প্রাণী আছে।
এগুলোর মধ্যে তিনটি চিত্রা হরিণ, একটি ময়ূর, আটটি বানর, তিনটি বাজপাখি, দুটি মেছোবাঘ, একটি অজগর, দুটি খরগোশ, একটি কালিম পাখি ও তিনটি তিতির পাখি রয়েছে।
করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে ২০২০ সালের মাঝামাঝিতে চিড়িয়াখানায় দর্শনার্থী প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। ধীরে ধীরে জনজীবন স্বাভাবিক হয়ে এলেও চিড়িয়াখানাটির ফটক খোলেনি। সেখানে থাকা প্রাণীগুলোকে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় স্থানান্তরের প্রক্রিয়া চলছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেছেন, ৩৬ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত চিড়িয়াখানাটির কদর রয়েছে জেলার ১৭টি উপজেলার মানুষের কাছে। কিন্তু জেলা প্রশাসন ও জেলা পরিষদের মধ্যে জমি নিয়ে জটিলতার কারণে চিড়িয়াখানা আর চলছে না। সম্প্রতি জেলা পরিষদ থেকে জেলা প্রশাসন চিড়িয়াখানা ও বোটানিক্যাল গার্ডেনটির জমির মালিকানা বুঝে নিয়েছে।
আর মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে চিড়িয়াখানাটির ইজারা বাতিল করায় ২০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করে ২০২১ সালের ২৯ আগস্ট উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন ইজারাদার আনিছুর রহমান। এখনো কোনো প্রতিকার পাননি বলে জানান তিনি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চিড়িয়াখানার বেশির ভাগ খাঁচা শূন্য হয়ে পড়েছে। লতাপাতায় ঢেকে গেছে দীর্ঘদিন ধরে খালি পড়ে থাকা সিংহের খাঁচাটি। বিশাল খাঁচায় সঙ্গীহীন একটি মাত্র ময়ূর। বাকি প্রাণীগুলো আছে অযত্ন আর অবহেলায়।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, চিড়িয়াখানার জায়গাটি বুঝে নেওয়ার পর এর বড় একটি অংশে গত বছরের শেষ দিকে কুমিল্লার জেলা প্রশাসক শাক-সবজি চাষের ব্যবস্থা করেন। প্রায় ৬০ প্রকারের সবজি উৎপাদন করা হয়। বর্তমানেও সেখানে শাক-সবজির চাষ করা হচ্ছে।
জানতে চাইলে কুমিল্লা জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘এখন আমাদের তত্ত্বাবধানে যেসব পশুপাখি রয়েছে সেগুলো শিগগিরই চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় স্থানান্তর করা হবে। এরই মধ্যে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তারা পশুপাখিগুলো নিতে সম্মত হয়েছেন। ’
কুমিল্লার ইতিহাসবিদ ও গবেষক আহসানুল কবীর বলেন, ‘আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, বর্তমান জেলা প্রশাসক এটিকে বন্ধ না করে নতুন রূপে সাজাবেন কুমিল্লার মানুষের জন্য। প্রয়োজনে মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করে এখানে দৃষ্টিনন্দন চিড়িয়াখানা, বিনোদনকেন্দ্র এবং একটি আধুনিক পার্ক তৈরি করবেন। কুমিল্লা জেলায় ৬০ লাখ মানুষের বসবাস। তাদের জন্য একটি চিড়িয়াখানা থাকবে না, এটি কেমন কথা!’
নগরীর বাসিন্দা মহিউদ্দিন আকাশ বলেন, ‘কুমিল্লা নগরীতে মানুষের মন ভরে নিঃশ্বাস নেওয়ার মতো তেমন কোনো জায়গা নেই। চিড়িয়াখানা বন্ধ করা নয়, প্রয়োজন সংস্কার করে আরো ভালোভাবে চালু করা। ’
জানতে চাইলে কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মো. কামরুল হাসান বলেন, ‘আমরা জায়গাটির মালিকানা বুঝে নিয়েছি। চিন্তা করছি, এখানে সুন্দর একটি উদ্যান বানানোর। এরই মধ্যে আমরা গাছপালা লাগাতে শুরু করেছি। ’